ফরিদপুরের অম্বিকারপুর ইউনিয়নের গোবিন্দুপুরের লাভলি-ইমতিয়াজ মোল্লা দম্পতি গত এক যুগ আগে ২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করে। বর্তমানে এই দম্পতির আবাদি জমির পরিমান ৩০ বিঘা। পরিবারের রয়েছে এক সন্তান রিফাত। সেও পড়ালেখার পাশাপাশি পরিবারের পেঁয়াজ বীজের ক্ষেতে কাজ করে। তাদের আশা গত মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে বীজের চাষ করে আয় করেছে কোটি টাকার মতো। এবার আবহাওয়া ঠিক থাকলে তাদের ৩০ বিঘা জমিনে ৯০ মণ বীজ উৎপাদন কবে। গত বছরের হিসাবে এবার মূল্য পেলে কমপক্ষে দুই কোটি টাকার বীজ বিক্রয় করতে পারবে তারা।
লাভলি-ইমতিয়াজ দম্পতির মতো একই স্বপ্ন দেখছে ফরিদপুরের আরও অনেক পেঁয়াজ বীজ চাষিরা।
আরও পড়ুন: মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখীর হাসি
ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের পেঁয়াজের বীজের জন্য সুখ্যাতি রয়েছে ফরিদপুরের। আর তাই ফরিদপুরের ৯টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলার কৃষকের মাঠে ১ হাজার ৭১১ হেক্টর জমিতে এখন এমনই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। তাহিরপুরী/বারী-১ এবং লাল তীর কিং বীজ থেকে লাগানো এই পেঁয়াজ আবারো মাঠ থেকে বীজ হয়ে কৃষকের ঘরে আসবে মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই। এই মৌসুমে এক হাজার ৫৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করতে পারবে তারা। যা সরকারি সংগৃহীত পেঁয়াজের বীজের দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৭০ ভাগই সরবরাহ করে ফরিদপুরের কৃষকেরা।
আবহাওয়া ঠিক থাকলে প্রতি শতাংশে কমপক্ষে আড়াই কেজি হারে বীজ উৎপাদন হবে। সে হিসাবে জেলায় চলতি মৌসুমে বীজ উৎপাদন হবে কমপক্ষে এক হাজার ৫৬ মেট্রিক টন।
ফরিদপুরের অম্বিকাপুর মাঠের চাষি লাভলী পারভিন বলেন, ‘সংসার জীবনের শুরুতেই পেঁয়াজ বীজের তৈরির করি, এটা আমার স্বামী ও আমার পরিবারের। এখানে কারো দয়া বা দানে না। তবে আমাদের গর্ব আমাদের বীজ দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনের সহায়তা করছে।’
একই মাঠের আরেক চাষি ইমতিয়াজ মোল্লা বলেন ‘দশ বছর আগে শুরুতে পেঁয়াজ চাষের দুই বিঘা জমি ছিল। গত বছরের ২০ বিঘা, চলতি বছরের ৩০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছি। তবে গত বছরের মতো ভাল দাম পেলে এই ‘কালো সোনা’ খ্যাত বীজ আমি দুই কোটি টাকা বিক্রয় করতে পারব।’
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলায় চা উৎপাদন শুরু
আবেদনে সাড়া মেলেনি: নিজেদের টাকায় ৫ বছর ধরে সড়ক নির্মাণ!
সালথার পেঁয়াজ বীজ চাষি নাছির হোসেন বলেন ‘এলাকার অনেক বেকার এখন বীজের চাষ করছে। যার অল্প জমি রয়েছে সেও তার জমিতে পেঁয়াজের বীজের চাষ করছে। চলতি মৌসুতে সবার ক্ষেত ভাল হয়েছে। আশা করছি ভালো উৎপাদন হবে।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হয়রত আলী বলেন, ‘এ বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুদে চাষিরা অধিক মুনাফা করে, এই কারণে এই ফসলকে ‘কালো সোনা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।’
কৃষি বিভাগ জেলা পেয়াজ বীজ চাষিদের নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে বলে তিনি জানান।
সরকারি এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মৌসুমে গতবারের তুলনায় ভালো উৎপাদন হবে। আশা করি চাষিরা মণ প্রতি যদি এক লাখ টাকাও পায় তবে ২৫০ কোটি টাকার বেশি আয় করতে পারবে। তবে গত মৌসুমে তারা (চাষিরা) মণ প্রতি দুই লাখ টাকার বেশি দরে বিক্রয় করতে পেরেছে।’